সাধারণত অপ্রাপ্তবয়স্কদের কিশোর কিশোরী বলা হয় । এ শ্রেণীর লোকেরা যে অপরাধমূলক কাজ করে থাকে তাকে কিশোর অপরাধ বলে । কিশোর-কিশোরী যে সামাজিক অসঙ্গতিমূলক কাজ করে অর্থাৎ যে কাজ সমাজের জন্য ক্ষতিকর এমন কাজ করে তাকে কিশোর অপরাধ বলে (juvenile delinquency) ।

সাধারণত ৫ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকলকে কিশোর হিসেবে গণ্য করা হয় । এদের দ্বারা সংঘটিত সকল অসামাজিক কাজ গুলোকে কিশোর অপরাধ বলে । কিন্তু আইনের দৃষ্টিতে যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তাদের কিশোর হিসেবে গণ্য করা হয় । এ বয়সে কিশোর কিশোরী সমাজে যে অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয় তাকে কিশোর অপরাধ বলে

কিশোর অপরাধ আইন কী ?

কিশোর অপরাধ একটি সামাজিক ব্যাধি । প্রতিটি দেশেই কিশোর অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে । বাংলাদেশ শিশু আইন ১৯৭৪ কিশোর অপরাধ বিচারের মূল আইন হিসেবে গণ্য করা হয় । এই আইনে কিশোর অপরাধের বিচারের কিশোর আদালত গঠন, কিশোরদের জন্য আলাদা হাজত বা আটক স্থান এবং কিশোর সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয় ।

এ আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী বলা হয়, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়েই শিশু আদালত গঠিত হবে । শিশু আদালত প্রতিমাসে অন্তত ২ থেকে ৩ বার কিংবা তার অধিক বসবে ।

দুর্নীতি কাকে বলে ?

ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক অবৈধ পন্থায় নীতি বহির্ভূত বা জনস্বার্থ বিরোধী কাজই দুর্নীতি । যেমন – ঘুষ ও স্বজনপ্রীতি উভয় কাজই দুর্নীতি । রাজনৈতিক এবং সরকারি ও বেসরকারি প্রশাসনের দুর্নীতি বলতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহারকে বুঝায় ।

সাধারণত ঘুষ, বল প্রয়োগ বা ভয় প্রদর্শন, প্রভাব খাটানো এবং ব্যক্তি বিশেষকে বিশেষ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা অর্জনকে দুর্নীতি বলে । অবৈধ সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য কোন ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাকৃত অবহেলাও দুর্নীতি । দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকে পেশ, ক্ষমতা পদবী, স্বার্থ, নগদ অর্থ বস্ত্রসামগ্রী প্রভূতি ।

দুর্নীতির মাধ্যমে কাউকে না কাউকে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয় । এ অপরাধের প্রকৃত ও কলাকৌশল আলাদা এবং একাজে দৈহিক শ্রম এর চেয়ে ধূত বুদ্ধির প্রয়োজন বেশি ।

কিশোর অপরাধ, দুর্নীতি
Corruption

Read More: শান্তি মিশন কী ? জাতিসংঘ সৃষ্টির পটভূমি

সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয় কিভাবে ?

যখন সামাজিক রীতিনীতি ব্যক্তির আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় তখন মানুষের নৈতিক অবনতি শুরু হয় । নৈতিক অবনতি ব্যাপক আকার ধারণ করলে সামাজিক প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গন শুরু হয় । সামাজিক প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গনের ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দেখা দেয় । এসব পরিস্থিতিতে সমাজে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয় ।

বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে সমাজে সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব

সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে সামাজিক গঠনের মধ্যকার পরিবর্তন । অর্থাৎ সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আচার আচরণের পরিবর্তন, সমাজের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির পরিবর্তন । মোটকথা সামাজিক পরিবর্তন হচ্ছে কোন জাতির জীবন ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিবর্তন ।

কিশোর অপরাধ, সামাজিক পরিবর্তন
কিশোর অপরাধ, সামাজিক পরিবর্তন

সামাজিক পরিবর্তন সংঘটিত হয় কখনো মন্থর আবার কখনো দ্রুত গতিতে । এই পরিবর্তনের ফলে যুক্ত হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন নতুন শাখা ও কলাকৌশল । আর বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে সমাজে সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব অপরিসীম । সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রকৃতিক, জৈবিক, সাংস্কৃতিক উৎপাদন যেমন প্রভাব বিস্তার করে তেমনি শিক্ষা, প্রযুক্তি, নতুন নতুন যোগাযোগের মাধ্যম, শিল্পায়ন ও নবায়ন সামাজিক পরিবর্তনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে । বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে জীবনে উৎপাদনগুলোর প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । যেমন শিক্ষা ক্ষেত্রে আজ গ্রাম ও শহরে উভয় স্থানে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা দেখতে পাই ।

গ্রামীণ জনসাধারণের মধ্যে সন্তানদের শিক্ষাদানের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে । যোগাযোগ ক্ষেত্রে উভয় স্থানে পাকা রাস্তাঘাট, বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি রয়েছে । আমরা বর্তমানে যে প্রযুক্তির ব্যবহার করছি তাও সমাজের পরিবর্তনের ফল । এর প্রযুক্তি শুধু সহ শহরাঞ্চলে নয় বরং গ্রাম অঞ্চলে কৃষি, হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, গরু মোটাতাজাকরণেও ব্যবহৃত হচ্ছে ।

তাছাড়া শিল্পায়ন ও নবায়নের ফলে বহু কলকারখানা গড়ে উঠেছে শহরে, ফলে অনেক মানুষের কর্মস্থান হয়েছে । মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পেয়েছে । এই সকল ক্ষেত্রে পরিবর্তনই মূলত সামাজিক পরিবর্তনের ফল ।

সুতরাং, বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরের সমাজে সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব অনস্বীকার্য ।

“ধন্যবাদ

By

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *