শান্তি মিশন কী ?
জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার ও বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠায় । বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন গুলোতে বাংলাদেশের অবদান অপরিসীম । বিশ্বের ১১ টি দেশে বর্তমানে প্রায় ১১,০০০-এর বেশী বাংলাদেশের সৈন্য জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষা, শান্তিপ্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে ।
শান্তিমিশনে শুধু বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ বাহিনী, মহিলা পুলিশও নিয়োজিত আছেন । আফ্রিকা এশিয়ার দেশগুলোতে যুদ্ধংদেহী বা দু বা ততোধিক সশস্ত্র গেরিলা গোষ্ঠীর মাঝে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ করেছে । এ কাজে এখন পর্যন্ত ৮৮ জন সৈন্য বিশ্বশান্তির জন্য শহীদ হয়েছেন । পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশের যে বাহিনীর প্রেরণ করে, তাই শান্তি মিশন নামে পরিচিত ।
জাতিসংঘ সৃষ্টির পটভূমি United Nations
যুদ্ধ কখনো জাতিতে জাতিতে সংকট নিরসনের পথ হতে পারে না । যুদ্ধ ডেকে আনে ভয়ংকার ধ্বংসলীলা এবং মানবজাতির জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগ এবং অশান্তি । বিশ শতকের ইতিহাসে পৃথিবীজুড়ে দু’টি বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গেছে । গত শতকের প্রথম দিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৯১৯) এবং ৪০ এর দশকের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫) সংঘটিত হয় । মূলত জাতিগত দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতাকারী শান্তিকামী জনতা যুদ্ধের ধ্বংসলীলা চুপ করে থাকে নি ।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১০২০ সালের ১০ জানুয়ারির বিশ্বের শান্তি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ‘’লীগ বা নেশন’’ সৃষ্টি হয়েছিল । কিন্তু ‘’লীগ বা নেশন’’ এর সাংগঠনিক দুর্বলতা ও অন্যান্য কারণে বিশ্বশান্তি বিধানে তা ব্যর্থ হয় । ১০৩৯ সালে পুনরায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা পৃথিবীকে গ্রাস করে । লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ নিহত ও আহত, গৃহহারা, পঙ্গুত্ব বরণ করেন । প্রতিটি দেশ হারায় তাদের কর্মক্ষম যুব সম্প্রদায়কে ।
যাহোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্ববিবেককে ভীষণ আতঙ্কিত করে তোলে এবং নাড়া দেয় । এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের তৎকালীন নেতৃত্ববৃন্দ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য আরেকটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে । এরপর ১৯৪৩ সালের তেহরানে ও মস্কোতে চারটি প্রধান শক্তির মধ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । উক্ত সম্মেলন ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব সম্মিলিত জাতিসংঘ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অবশেষে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ আত্মপ্রকাশ করে । এজন্য প্রতি বছর ২৪ অক্টোবর কে জাতিসংঘ দিবস হিসেবে পালন করা হয় । বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ এর সদস্য ।
পাঁচটি প্রধান অঙ্গ এবং সেক্রেটারিয়েট নিয়ে এটি গঠিত। পাঁচটি অঙ্গ হচ্ছে : সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, অছি (তত্ত্বাবধায়ক) পরিষদ এবং আন্তর্জাতিক বিচারালয় বা আদালত । জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত । একে ‘’বিতর্ক সভা’’ বলে অভিহিত করা যাই । নিরাপত্তা পরিষদ হচ্ছে জাতিসংঘের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকারী সভা । ৫ টি স্থায়ী ও ১০ টি অস্থায়ী মোট ১৫ টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে এটি গঠিত । পাঁচটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হচ্ছেঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন । এদের প্রত্যেকের ‘ভেটো প্রদান’ করার বা কোনো প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ক্ষমতা আছে । অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাজ হচ্ছে ওই সব ক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতি । স্বাধীনতা প্রাপ্ত নয়- এরুম বিশেষ এলাকায় তত্ত্বাবধায়নে জন্য অছি পরিষদ গঠিত ।
আন্তর্জাতিক বিবাদ মীমাংসা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কাজ । নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে এর কার্যালয় অবস্থিত । সেক্রেটারিয়েট হচ্ছে জাতিসংঘের প্রশাসনিক বিভাগ । Secretary-general বা মহাসচিব এর প্রধান নির্বাহী । আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের জাতিসংঘের সদর দপ্তর অবস্থিত ।
সিডও (CEDAW) সনদ কী ?
সিডও (CEDAW) একটি বিশেষ সনদ । জাতিসংঘ কর্তৃক নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য- বিলোপ নীতি সংক্রান্ত সনদই সিডও সনদ নামে পরিচিত । এই সনদটি নারীর অধিকার সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ দলিল,যা বিভিন্ন সময়ে নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে গ্রহণকৃত বিভিন্ন ইস্যুতে সমন্বিত করে । এর লক্ষ্য হলো নারীর সকল প্রকার অধিকার নিশ্চিতকরণ ।

জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক
জাতিসংঘ বিশ্বশান্তি বিধানে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে । ১৯৪৭ সালে গ্রিসের সঙ্গে আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া ও যুগোস্লাভিয়ার সুসম্পর্ক স্থাপনে জাতিসংঘের অবদান রয়েছে । এছাড়া প্যালেস্টাইন যুদ্ধ আরব-ইসরাইল সংঘর্ষ সুয়েজ সংকট ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে এবং দীর্ঘস্থায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিরসনে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল ।
Thanks.